ছবিঃ ২৭-০৪-২০১৭
সময়টা ছিল ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল নাজমুল হাসান রাসেল এর জন্মদিন। সেদিন নাজমুল বন্ধুদের সাথে কোন পার্টি না করে ছুটে এসেছিলেন কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একসাথে জড়ো করে তাদের সাথে কেক কেটে খাবার বিতরণ করেন। তারপর থেকে মাঝে মাঝে টিফিনের টাকা জমিয়ে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে খাবার নিয়ে ছুটে আসতেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল। পথশিশুদের সাথে খেলাধুলা গল্প করে মুগ্ধতায় সময় পার করতেন, তার খুব ভালো লাগতো। আর তখনই তার নজরে আসে পথশিশুরা শিক্ষার অভাবে প্রতারিত হচ্ছে তার চিত্রটি। ভেতরটায় নাড়া খান তরুণ স্বেচ্ছাসেবী নাজমুলের। তার বুঝতে সময় লাগেনি এই শিশুরা বর্ণমালা থেকে অনেক দূরে। নিরক্ষরতার অন্ধকার জগত তাদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে। তখনই মনে মনে স্থির করে নেন এই শিশুদের জন্য কিছু করতে হবে। ভাবনাটাকে তখনই কাজে লাগাতে পথে নামেন তিনি, প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পথশিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন।
স্বেচ্ছাসেবী নাজমুল বলেন, অর্থবিত্ত কত মানুষই আছে তাদের কজনই বা সমাজের কল্যাণ মুখী কাজ করে থাকেন। কত রাত শুধুই শিশুদের জন্য কিছু করার ভাবনা জেগে জেগে কেটে গেছে আমার।
ভাবনায় আর সময় নষ্ট করতে চাইলেন না তিনি। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে পথে নামলেন। প্রতি বৃহস্পতিবার তার কলেজের ক্লাস শেষ করে আদর্শলিপি কিনতেন এবং শুক্রবার কলেজ বন্ধের দিনে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন ও বস্তিতে গিয়ে শিশুদের মধ্যে আদর্শ লিপি ও খাবার বিতরণ করতেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হাসান রাসেল এই কার্যক্রম গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করলে তার কার্যক্রম গুলো তরুণ সমাজকে বেশ প্রভাবিত করে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানবতার কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করতো। শুরুতে একাই কাজ করে যাওয়ার মনস্থির করলেও পরে আস্তে আস্তে যখন প্রতিদিনই সদস্য হওয়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করতো তখন তিনি ভাবলেন সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করবেন। এরপর থেকে যারাই স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতো তাদেরকেই সংগঠনে যুক্ত করে নিতেন।
তার কিছুদিন পর রমজান চলকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন রকম স্ট্যাটাস দেয় সংগঠনের উদ্যোগতা নাজমুল। কিছু স্বেচ্ছাসেবী ভাই-বোনদের সাড়া মিলে মানবতার। স্বেচ্ছাসেবী ভাই-বোনদের আর্থিক সহযোগিতা ও শ্রমকে একত্রে কাজে লাগিয়ে রমজান মাসে ১০০ জনের সাথে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে ইফতার বিতরণ ও ১৫০ জনকে ঈদ বস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে সংগঠনের পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়।
অদম্য স্বেচ্ছাসেবী নাজমুল জানান, বই ও খাবার বিতরণ করতে গিয়ে মনে হলো শিশুদের কোথাও ঝড়ো করে বর্ণমালার সাথে পরিচিত করানো দরকার। সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে কুমিল্লা রেইসকোর্স রেললাইনের পাশে অদম্য স্কুল নামে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খোলা আকাশের নিচে পাঠশালা গড়ে তোলেন। নিজেই শিশুদের অক্ষর এর সাথে পরিচিত করাতে নামেন শিক্ষকের ভুমিকায়। এতে সংগঠনের সদস্যরা এগিয়ে আসেন। কিন্তু নিয়মিত তার বাসা থেকে গিয়ে পাঠদান করাতে যাতায়াত খরচ আসে তো তা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতো নাজমুল। বাসা থেকে দেওয়া টিফিনের অর্ধেক টাকা না খেয়ে জমিয়ে রাখতেন সংগঠনের জন্য।
অদম্য স্বেচ্ছাসেবী নাজমুল বলেন, সুবিধা প্রাপ্ত শিশুদের অভিভাবকরা তিন বছর বয়সেই তাদের সন্তানদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। উন্নত স্কুলে ভর্তি করেন, গৃহশিক্ষক রেখে পড়ান। কিন্তু এই সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুরা তার কোন কিছুই পায় না। আমার লক্ষ্য হচ্ছে এসকল শিশুদের কাছে পৌঁছানো। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে, গাড়িতে করে সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। তবে আমার তো এতো সামর্থ নেই যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠান যদি আমাদের অদম্য স্কুল গুলো পরিচালনায় সহযোগিতা করে তবেই আমার চেষ্টা, শ্রম ও পথচলা সফল হবে বলে মনে করি। সাড়া দেশে অদম্য স্কুল, অদম্য শিশু স্বাস্থ্য ও পূর্নবাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন আমার।